পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৩ অক্টোবর, ২০১২

জননী

ডাঃ গৌর চন্দ্র সূত্রধর

একদা এক সন্ধ্যায় নামলো হঠাৎ বৃষ্টি
জননীর বয়স হয়েছে অনেক
তাই আগের মতো নেই দৃষ্টি।
বউকে ডেকে বলছে মাগো
পল্লাদ আইছে কি ঘরে
রাত হইতাছে তবু নেই কাছে
আমার মনটা কেমন করে।
আরেক ছেলে সুভাষ কনে রইল
কি কমু তাদের কথা
বারান্দায় দাঁড়াইয়া দেখতো
ও ঘরে যায় নাকি ওরে দেখা।
মায়ের আরেক ছেলে থাকে ঐ পাড়ায়।
তার লাগিও মাঝে মাঝে
চোখের জল ঝড়ায়।
’৭১ এর যুদ্ধ করেছে তার ছেলে এইতো অহংকার
ভাবেনি কখনো মায়ের কোলে
ফিরে আসবে আবার।
তাদের অনেক সইতে হয়েছে কষ্টের ভার
তবু সার্থক হয়েছে
ছোট ছেলে হয়েছে ডাক্তার।
তিন সন্তান মরার পর কত সাধনার পরে
আলো করে এলো পাঁচ সন্তান
একের পর এক এই ঘরে।
নাতিকে ডেকে বলছে ফোন দে
তোর কাকার কাছে
এখন সে কোথায়, কেমন আছে?
আরেক ছেলে অনেক আগেই চলে গেছে ইন্ডিয়া
তার লাগি কত দিন রাতি কাটায়
কান্দিয়া কান্দিয়া।
কিছুক্ষণ পর উঠল উত্তাল ঝড়
কোথায় রইল আমার ছেলেরা
ভালো রাইখ নটবর।
জননীও কিন্তু অসুস্থ তবু নিজের কষ্ট ভুলে
সন্তানদের জন্য কেমন করছে
না দেখলে বুঝানো যাবেনা বলে।
সাধ থাকলেও সাধ্য নেই দেখা করবে সবার সাথে
বৃদ্ধা হয়েছে তাতে কি
তার অন্তরে মায়া মমতা সবই আছে গেঁথে।
বারবার উঠে আর বসে খুলতে চায় দ্বার
এহনো আইলো না বাঁছা
চারদিক অন্ধকার।
দুশ্চিন্তা তার কাটেনা যতক্ষণ তণয় আসেনা কাছে
দু’হাত তুলে বলছে
হে দীননাথ,তুমি ছাড়া কেবা আছে।
হরিণাম করতে লাগলো ছেলেদের মঙ্গলের তরে
ঝড় শেষে কিছুক্ষণ পরে পল্লাদ ফিরলো ঘরে
মায়ের চোখে বইছে আনন্দের ধারা
আবার রাগ করে বলছে
এতো রাতে কোথায় থাকিস তোরা?
জননী হওয়া কত কষ্টের কি বলব তাদের ব্যথা
আমার পক্ষে সম্ভব নয়
তাদের নিয়ে লেখা।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন